কুয়েত দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি কর্মীদের জন্য আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালে কুয়েতে কাজের সুযোগ, বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা কুয়েতে চাকরি করতে আগ্রহী, তাদের জন্য সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন হলো – “কুয়েত বেতন কত ২০২৫?” এই নিবন্ধে আমরা কুয়েতে বিভিন্ন পেশার বেতন কাঠামো, ন্যূনতম বেতন, অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতন পরিবর্তন এবং কুয়েতের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কুয়েতে ২০২৫ সালে গড় বেতন কত?
কুয়েতে কাজের ধরন ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে বেতন পরিবর্তিত হয়। তবে সাধারণত একজন শ্রমিক মাসে ৩৫,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। দক্ষ পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
যারা নতুন কাজ শুরু করছেন বা অল্প অভিজ্ঞতা আছে, তাদের বেতন তুলনামূলক কম হতে পারে। তবে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেতন বাড়ার সম্ভাবনাও বেশি।
কুয়েতের বিভিন্ন পেশার বেতন
নির্মাণশিল্প ও শ্রমিকদের বেতন
কুয়েতে নির্মাণশিল্পে প্রচুর বিদেশি কর্মী কাজ করে। এখানে শ্রমিকদের বেতন সাধারণত ৪০,০০০ – ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- সাধারণ শ্রমিক: ৩৫,০০০ – ৫০,০০০ টাকা
- রাজমিস্ত্রি: ৪০,০০০ – ৬০,০০০ টাকা
- প্লাম্বার: ৫০,০০০ – ৭০,০০০ টাকা
ড্রাইভার ও পরিবহন কর্মীদের বেতন
- প্রাইভেট ড্রাইভার: ৬০,০০০ – ৭০,০০০ টাকা
- ট্রাক ড্রাইভার: ৭০,০০০ – ৮৫,০০০ টাকা
কারিগরি ও মেকানিক্যাল কাজের বেতন
- ইলেকট্রিশিয়ান: ৬৫,০০০ – ৭৫,০০০ টাকা
- মেকানিক: ৫০,০০০ – ৬০,০০০ টাকা
- ওয়েল্ডার: ৩৫,০০০ – ৪৫,০০০ টাকা
অন্যান্য পেশার বেতন
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মচারী: ৪০,০০০ – ৬০,০০০ টাকা
- সুপারমার্কেট ক্যাশিয়ার: ৩৫,০০০ – ৫০,০০০ টাকা
- ডেলিভারি ম্যান: ৪০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা
কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কত?
২০২৫ সালে কুয়েতে ন্যূনতম বেতন ৩০,০০০ – ৩৫,০০০ টাকা হতে পারে, তবে এটি কাজের ধরন ও কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। অনেক কোম্পানি বাসস্থান ও খাওয়ার সুবিধা প্রদান করে, যা বেতনের বাইরেও কর্মীদের জন্য অতিরিক্ত লাভজনক হয়।
কুয়েতে উচ্চ বেতনের চাকরি
যাদের অভিজ্ঞতা বেশি এবং দক্ষতা রয়েছে, তারা উচ্চ বেতন পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। কিছু উচ্চ বেতনের চাকরির তালিকা:
- ডাক্তার ও নার্স: ১,৫০,০০০ – ২,৫০,০০০ টাকা
- ইঞ্জিনিয়ার: ১,২০,০০০ – ২,০০,০০০ টাকা
- আইটি প্রফেশনাল: ৯০,০০০ – ১,৫০,০০০ টাকা

কুয়েত কোম্পানি ভিসার মাধ্যমে চাকরির সুযোগ
কুয়েতে বৈধভাবে কাজ করতে হলে কোম্পানি ভিসা বা কাজের পারমিট প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কোম্পানি ভিসা পাওয়া যায়।
কোম্পানি ভিসা পেতে যা প্রয়োজন:
- পাসপোর্ট
- মেডিকেল রিপোর্ট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- স্পন্সর কোম্পানির অনুমোদন
কিছু প্রতারক দালাল ভুয়া কোম্পানি ভিসার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করে। তাই চাকরির সুযোগ গ্রহণের আগে ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কুয়েতের জীবনযাত্রার ব্যয়
কুয়েতে কাজ করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার খরচ সম্পর্কেও জানা জরুরি। সাধারণত কুয়েতে বাসস্থান, খাবার, ও অন্যান্য খরচ তুলনামূলক বেশি।
- বাসা ভাড়া: প্রতি মাসে ১৫,০০০ – ২৫,০০০ টাকা
- খাবারের খরচ: প্রতি মাসে ৮,০০০ – ১৫,০০০ টাকা
- যাতায়াত খরচ: প্রতি মাসে ৫,০০০ – ১০,০০০ টাকা
যদি কোম্পানি থাকা ও খাওয়ার সুবিধা দেয়, তবে খরচ অনেকটাই কমে যায় এবং বেতনের বেশিরভাগ অংশ সঞ্চয় করা সম্ভব।

শেষ কথা
“কুয়েত বেতন কত ২০২৫?” – এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। নতুন শ্রমিকদের বেতন কম হলেও অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে ভালো বেতনের কাজ পাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে কুয়েতে যাওয়ার আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং প্রতারক এজেন্টদের থেকে দূরে থাকা জরুরি।
আপনি যদি কুয়েতে চাকরির সুযোগ খুঁজছেন, তাহলে সরকারি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ করুন এবং নিশ্চিতভাবে বৈধ ভিসা নিয়ে বিদেশ গমন করুন।